তাঁর ভাবনা, মনন, সৃষ্টিশীলতায় একসময় সিনেমার জগত্ হয়ে উঠছিল ‘ঋতুময়’। চলচ্চিত্র জগতে তিনি তৈরি করেছিলেন এক স্বতন্ত্র ঘরানার। তিনি একদিকে যেমন ছিলেন সমাদৃত তেমনই বিতর্কিতও। সিনেমায় তাঁর ভাবনা, ক্যামেরা, পরিচালনা যেমন মানুষকে অন্যভাবে দেখতে সাহায্য করেছিল, ঠিক তেমনই তাঁকে ব্যাঁকা চোখে দেখারও মানুষ কম ছিল না।তাঁর নারীসুলভ কথাবার্তা, ভাবনার দুঃসাহসিকতায় তিনি থাকতেন সর্বদা চর্চায়। তবে খুব তাড়াতাড়ি আপনজন, গুণমুগ্ধদের ফাঁকি দিয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়া মানুষটি আজও বহু মানুষের মনের মণিকোঠায় বিরাজ করেন। তিনি ঋতুপর্ণ ঘোষ। বাংলা চলচ্চিত্র জগতের এক অন্যতম নক্ষত্র। আজ, ৩১ অগস্ট তাঁর জন্মদিন। বড় মন কেমনের জন্মদিন। এমন দিনে প্রয়াত পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষকে স্মরণ করে স্কুপিপোস্টের তরফে রইল কিছু জানা-অজানা কথা।
একটু নারীসুলভ কিন্তু প্রখর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এক মানুষ ছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। সাউথ পয়েন্টে পড়াশোনা। জীবনের শুরুতে ছিলেন বিজ্ঞাপনী জগতের ক্রিয়েটিভ কপি রাইটার। বিজ্ঞাপন থেকে সিনেমা, সিরিয়াল যেখানেই কাজ করেছেন তাঁর সৃজনশীলতার পরিচয় রেখে গিয়েছেন। জানেন কী ছোট্ট ঋতুর কথা, যখন বাবা, মা, ঠাকুমার সঙ্গে তিনি বেড়ে উঠছিলেন।
ঋতুপর্ণ প্রথম পাখি দেখতে শিখেছিলেন লাল রঙের বেড কভারে। এতটাই ছোট ছিলেন পাখি বলতে পারতেন না। বলতেন কাপি। ছোট্ট ছেলেটিকে স্নান করার সময় গান গাইতেন মাসিমনি। আর তা শুনতে শুনতে ঋতু শিখেছিলেন আলো আমার আলো ওগো গানটা।সন্ধেয় পড়া শেষে বাবা সুনীল ঘোষ তাঁকে পড়ে শোনাতেন শেখর বসুর মহাভারত। ঠাকুমার সঙ্গে একসঙ্গে বসে মহাভারত শুনতেন তিনি। বাবা তাঁকে শিখিয়েছিলেন দক্ষিণ ও উত্তর ভারতের মন্দিরের তফাত্ আরও অনেক কিছু।ঘুম পাড়ানোর সময় ছোট্ট ঋতুকে মা ‘সঞ্চয়িতা’ থেকে কবিতা পড়ে শোনাতেন। এভাবেই তাঁর প্রথম রবি ঠাকুরকে চেনা।
তারপর বড় হওয়া। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেন।ঋতুপর্ণের প্রথম ছবি বাচ্চাদের জন্য হীরের আংটি।কিন্তু জানেন কি ঋতুপর্ণ ঘোষ প্রথম কোন ছবিতে অভিনয় করেছিলেন? ‘কথা দেইথিল্লি মা কু’ ওড়িয়া ছবিতে প্রথম অভিনেতা ঋতুপর্ণ ঘোষকে দেখা যায়।হিমাংশু পারিজা পরিচালিত ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ২০০৩ সালে। সফল পরিচালক ঋতুপর্ণ একাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন। তাঁর শেষ অভিনয় করা ছবি ছিল চিত্রাঙ্গদা।
রূপান্তরকামীদের নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলা মানুষটিকে অনেকেই ব্যাঁকা চোখে দেখেছেন। কিন্তু অমিতাভ বচ্চন থেকে ঐশ্বর্য, মনীশা কইরালা, অজয় দেবগনের মতো শিল্পীরাও ঋতুপর্ণের সঙ্গে কাজ করেছেন। পরিচালক হিসেবে ঋতুপর্ণ সমস্ত তারকাদের কাছে ছিলেন অন্যতম প্রিয়। ঋতুপর্ণ মানুষটি কিন্তু ভীষণই সৃষ্টিশীল। শোনা যায় ছবিতে নায়িকাদের অনেক সময় নিজের হাতে মেকআপ করিয়েছেন তিনি।অসাধারণ ছিল তাঁর হাতের কাজ। অভিনেত্রী, পরিচালক অপর্ণা সেনের সঙ্গে অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক ছিল ঋতুপর্ণ ঘোষের। অপর্ণার বড় মেয়ে ডোনার বিয়েতে প্রতিটি তত্ত্বে নিজে হাতে ছড়া লিখেছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। দেখুন সেই ছড়া...
পাল্কি ক'রে বৌ এল রে, পাড়াপড়শি কৈ?
অঙ্গে শাড়ী বালুচরী, রূপ করে থৈ থৈ
কল্কা করা নক্সা আঁচল, জামরঙা তার খোল,
ছোট্ট রুপোর পাল্কি সাথে-সাবধানেতে তোল।
ঘিয়ে রঙা ঢাকাই শাড়ী, লাল রঙা তার পাড়।
জরির ছোঁয়ায় সাজটি যেন লক্ষ্মী প্রতিমার।
টুকটুকে লাল ব্লাউজ আছে, রং মিলিয়ে কেমন!
লক্ষ্মী সাথে আপনি এলেন মা লক্ষ্মীর বাহন।
টুকটুকে রং চিকন শাড়ী পড়বে মোদের মেয়ে
গোলাপী রং ফুলে ফুলে থাকবে শরীর ছেয়ে।
সেই রঙেরই চোলি, মেয়ের রূপ করে ঝলমল
কাঠের সিঁদুরকৌটো দিলাম, কপালে জ্বলজ্বল।
জোব্বা পরা ফ্যাশন এখন, কাফতান তার নাম
আগাগোড়া আরশি ঢাকা তিনটে পাঠালাম
দু'খানি তার কলমকারি রঙবাহারি কাজে।
অন্যটিতে আয়না দেওয়া, সাদা-বুকের মাঝে।
হাল্কা সবুজ রাতপোশাকে সাদা রঙের লেস
গৌরবরণ কনের দেহে স্নিগ্ধ লাগে বেশ
সারা শরীর স্নিগ্ধ হবে লোশনে পাউডারে
সাবান এবং গন্ধপাতা দিলাম প্যাকেট ভ'রে।
মন্তব্য - আলোচনায় যোগ দিন 0 মন্তব্য | প্রবেশ করুন