চাকরি পেয়ে বেঙ্গালুরু আসার পর বুধাদিত্যর সঙ্গে আলাপ সোমলতার। প্রেম। তারপরই দুজনে ঠিক করে একসঙ্গে থাকবে।তিন মাস ভালই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করে সোমলতার শরীর খারাপ লাগতে শুরু করে। বমিভাব, মাথা ঘোরা। সন্দেহ হওয়ায় ইউরিন টেস্ট কিটের মাধ্যমে জানতে পারে সে প্রেগন্যান্ট।মাথায় হাত সোমলতা, বুধাদিত্যর। কারণ, গোলমাল হয়েছে বুঝেই আই পিল খেয়েছিল সোমলতা। তারপরেও কী করে হল, তা কেউ বুঝতে পারছে না।
সঞ্জীব আর ঋতুপর্ণার চার বছর হল বিয়ে হয়েছে।দুবছরের যমজ মেয়ে আছে। সুরক্ষিত সময়ে সহবাসের পরেও হঠাৎ করে প্রেগন্যান্ট হয়ে পড়েন ঋতুপর্ণা।
মধুরিমা, শ্রীজাতের বিয়ে হয়েছে দুবছর। লাভ ম্যারেজ। দুজনেই থ্যালাসেমিয়ার ক্যারিয়ার হওয়ায় ভবিষ্যতের কথা ভেবে প্রেগন্যান্সি প্ল্যানিংয়ে ইতি টানতে হয়েছে। শ্রীজাত যৌন সম্পর্কের সময় সুরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়ার পরেও কিছুদিন পর মধুরিমা বুঝতে পারে সে প্রেগন্যান্ট।
পরিস্থিতি আলাদা। কিন্তু তিনটি ক্ষেত্রেই যুগল আনওয়ান্টেড প্রেগন্যান্সির শিকার। অর্থাৎ বাচ্চা না চাওয়া সত্ত্বেও সন্তান সম্ভবা হয়ে পড়া।এমনটা আমাদের জীবনে মাঝমধ্যেই ঘটে যায়। তখন তৈরি হয় জটিল পরিস্থিতি। কী করনীয় জানাচ্ছেন বিশিষ্ট স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ইন্দ্রানী নায়েক নন্দী।
ইন্দ্রানী জানাচ্ছেন শুরু থেকেই যদি উপযুক্ত সুরক্ষা নেওয়া হয়, তাহলে এ ধরনের পরিস্থিতির সম্ভাবনা থাকে না। পুরুষরা কন্ডোম ব্যবহার করতে পারেন। মহিলারা খেতে পারেন ওরাল কনট্রাসেপটিভ পিল। ইদানীং নতুন এমন অনেক ওষুধ এসেছে যাতে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া প্রায় হয় না। তার পরেও যদি কোনও মহিলার ওষুধে অসুবিধা হয় তিনি কপার টি ব্যবহার করতে পারেন। এক বছর, তিন বছর, পাঁচ বছর বিভিন্ন মেয়াদে কপার টি ব্যবহার করা যায়। কপার টি-র কেমিক্যাল রিঅ্যাকশনে স্পার্ম বা শুক্রানু, ডিম্বানুর সঙ্গে মিশে এমব্রায়ো বা ভ্রূণ তৈরি করতে পারে না।
কিন্তু সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় ভুলভ্রান্তি হতে পারে। যার জেরে প্রেগন্যান্সি এসে যায়। কখনও কনডোম লিক হতে পারে। কখনও কন্ট্রাসেপটিভ পিল খেতে ভুল হলে গর্ভধারনের সম্ভাবনা তৈরি হয়। সুতরাং সুরক্ষায় ফাঁক থাকলে না চাইতেও প্রেগন্যান্সি আসতে পারে।
তাই অসুরক্ষিত যৌনসংসর্গ হলে আনওয়ান্টেড প্রেগন্যান্সি রুখতে প্রথমে আই পিল খাওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে সেক্সুয়াল রিলেশনের ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আই পিল খেলে তা কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।কিন্তু আই পিল খেতে তার চেয়ে বেশি দেরি হলে বাড়ে এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির সম্ভবনা।আবার আইপিল খেলেই যে তা ১০০ শতাংশ কার্যকরী হবে সেটা নয়। অনেক সময় আই পিল ফেল করতে পারে।দেখা গেল আই পিল খাওয়ার পরও প্রেগন্যান্সি হয়েছে।আর একটি বিষয় মাথায় রাখা দরকার আই পিলের নানা রকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে। তাই যখন-তখন আইপিল খাওয়া ঠিক নয়।এটা এমারজেন্সি মেডিসিন। আইপিলের প্রভাব মেনস্ট্রুয়েশনে পড়তে পারে। সেটা অনিয়মিত হতে পারে। এছাড়া, গা-বমি, মাথা ঘোরার ভাব হতে পারে। বিষয়টা নিয়ে সতর্ক থাকা দরকার।
যদি প্রেগন্যান্সির কোনও সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে হয়, তাহলে আইপিল খাওয়ার পরও খেয়াল রাখা দরকার মেনস্ট্রুয়েশন ঠিক সময়ে হচ্ছে কি। না-হলে, যে কোনও প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিটের সাহায্য নিয়ে দেখতে হবে প্রেগন্যান্ট হয়েছেন কিনা। তারপর আর দেরি না-করে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়াই ভাল।
প্রেগন্যান্সি এলে ৪৯ দিন পর্যন্ত ওষুধের মাধ্যমেই তা অ্যার্বট করা সম্ভব। কিন্তু যদি এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি হয় তাহলে জটিলতা বাড়ে।আইপিলে থাকা প্রোজেস্টেরন যেহেতু ডিম্বানু ও শুক্রানুর মিলনে নানাভাবে বাধা তৈরি করে।এক্ষেত্রে ফ্যালোপিয়ান টিউবের মটিলিটি বা ফ্লুইডের গতিপ্রবাহ কমে যাওয়ায় ফ্যালোপিয়ান টিউবে ফার্টিলাইজেশন হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে ভ্রূণ থেকে যায় ইউটেরাসের বাইরে। সেখানেই বাড়তে শুরু করে।একে বলে এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি।
তেমনটা হলে, যদি ভ্রূণ খুব ছোট থাকে সেক্ষেত্রে ইঞ্জেকশেনর মাধ্যেম ওষুধ দিয়ে অ্যাবরশন করা যেতে পারে। কিন্তু তা-না হলে সার্জারির পথই একমাত্র খোলা থাকে।
প্রেগন্যান্সির ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত অ্যাবরশন সম্ভব। এক্ষেত্রে সাত সপ্তাহ পেরিয়ে গেলে সাধারণত, সার্জারির মাধ্যেমই ভ্রূণ অ্যাবর্ট করা হয়।তবে চিকিৎসকের কথায়, এত জটিলতার দরকারই পড়বে না যদি যৌন সংসর্গের সময় একটু সচেতন হওয়া যায় আর সুরক্ষা নেওয়া যায়।এক্ষেত্রে প্রথম থেকে খেয়াল রাখা দরকার যাতে যৌন সম্পর্কের সময় প্রোটেকশন নেওয়া হয়। কারণ, সে সময় একটু সচেতন হলেই অবাঞ্ছিত গর্ভধারণের প্রশ্ন থাকে না।
মন্তব্য - আলোচনায় যোগ দিন 0 মন্তব্য | প্রবেশ করুন