বিজ্ঞান বড়ই আশ্চর্যের বিষয়। শোনা যায় সেই প্যালিয়োজোয়িক যুগ থেকেই মশার নাকি রমরমা! অথচ মেসোজোয়িক যুগের অতবড় দানবরা অর্থাৎ ডাইনোসররাও কিন্তু প্রকৃতির সাথে জাস্ট অ্যাডজাস্ট করতে পারেনি বলেই আজ মার্কেট থেকে হাওয়া। মেডিক্যাল সায়েন্সের রেকর্ড ঘেঁটে দেখা যায় যে প্রায় ১৭৭৯ সাল থেকে সেই মশক কুলের একটি প্রজাতি এডিস ইজিপ্টাই। তিনি এসে বাজারে একটি নতুন রোগ আমদানি করলেন। তার নাম ডেঙ্গি। বাংলায় অনেকে একে ডেঙ্গুজ্বরও বলে থাকেন। এই এডিস ইজিপ্টাই মাঝরাত থেকে ভোরবেলা এই সময়ের মধ্যেই কামড়ায়। এক কামড়েই ডেঙ্গির ভাইরাস মানবদেহে প্রবেশ করে যায়। বিষয়টা হচ্ছে এডিস ইজিপ্টাই পরিস্কার জলে ডিম পাড়ে এবং দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে। সাধারণত এই পরিস্কার জল জমেই হল বৃষ্টির ফলে। আর যখন তখন বৃষ্টি হলেই ডেঙ্গির মশার বাড়বৃদ্ধি হয়। তাই সাধারণভাবে বৃষ্টি হলেই একটু সাবধানে থাকতে হয় বৈকি। এই ডেঙ্গিজ্বর হলে যদি ঠিকমতো ও অবশ্যই সময়মতো চিকিৎসা না করানো হয় তবে তা প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। আসুন জেনে নিই এর উপসর্গগুলি ঠিক কিরকম? প্রচণ্ড জ্বর আসবে। তারসাথে অসহ্য মাথাব্যথা ও গা বমিবমি ভাব। পেশীতে ও গাঁটে গাঁটে তীব্র ব্যথা ও ত্বকে লাল লাল ফুসকুড়ি দেখা যাবে। তবে এই উপসর্গ মানেই যে ডেঙ্গি হয়েছে তা কিন্তু নয়। সেটা সময়মতো রক্ত পরীক্ষা করিয়ে জেনে নেওয়া যায়।কারণ এই সময়মতো রক্তপরীক্ষাটাই লোকে করেনা বলেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে। রক্ত পরীক্ষায় বোঝা যায় যে প্লেটলেটস্ বা অনুচক্রিকা কণিকা কতটা আছে বা নেমে গেছে।
ডেঙ্গির বিরুদ্ধে কিভাবে সতর্কতা নেবেন
মশা বাহিত মারাত্মক রোগগুলির মধ্যে একটি হল ডেঙ্গি, সঠিক পরিচর্যা করা হলে প্রতিরোধ করা যেতে পারে। এই রোগ থেকে নিরাপদ থাকার সহজ উপায় হল আপনার আশেপাশে মশার বংশ বৃদ্ধি হতে না দেওয়া।
1. আপনার বাড়ির চত্বর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।
2. যেকোন স্থান বা বাড়ির আশেপাশে পরিস্কার জল জমতে দেবেন না। এইটা খুবই বিপজ্জনক কেননা মশারা স্থির পরিষ্কার জলে ডিম পাড়তে আসে।
3. আপনার বাড়িতে লুকানো মশা মারতে বাড়ির প্রতিটি কোণে প্রতিদিন ভালো কোন ব্রান্ডের মশা মারা স্প্রে দিয়ে স্প্রে করুন।
4. আপনার স্যাঁতস্যাঁতে জঞ্জাল আলাদা রাখুন এবং ডাস্টবিনে পুঁটলি বেঁধে ফেলে দিন।
5. এই বর্ষায়, আপনার ডেঙ্গি থেকে সংক্রমণের সম্ভাবনা আছে/জমা তাজা জল বাড়ার কারণে প্রচন্ড হারে মশা বাড়ছে; এই সময়ে নিরাপত্তার সমস্ত পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে।
6. শরীরের কোন স্থান উন্মক্ত থাকবে না এমন কাপড় জামা পড়ুন।
7. মশা মারা ক্রিম লাগান এবং সর্বদা নিজের সঙ্গে রাখুন।
8. ভোরবেলা ও সন্ধ্যায় বেশিরভাগ সময় বাড়ির দরজা এবং জানালা বন্ধ রাখুন।
9. একদিন ব্যবহারের পরই আপনার হ্যান্ড টাওয়েল কাচুন ও পাল্টানো করুন।
10. আপনার ভেজা কাপড় জামা ও জুতো শুষ্ক কাপড় জামা থেকে দূরে রাখুন। এছাড়াও, ভিজে জামাকাপড় যত শীঘ্র সম্ভব ছেড়ে শুকানোর চেষ্টা করুন।
11. কেবল নিজের বাড়ি নয় আমাদের সকলকে আমাদের এলাকা ও শহর উভয়ই পরিষ্কার রাখতে হবে।
মন্তব্য - আলোচনায় যোগ দিন 0 মন্তব্য | প্রবেশ করুন