২৫ ডিসেম্বর বড়দিন মানেই শীতে নরম রোদ্দুর মেখে ঘুরে বেড়ানো। বছর পনেরো আগেও ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা বড়িদনে বাবা মায়ের হাত ধরে চিড়িয়াখান যেত। কলকাতায় ভিক্টোরিয়া, বিড়লা প্ল্যানোটোরিয়াম, জাদুঘর দেখতে যাওয়ার হুজুগ মানেই হয় বড়দিন নয়তো ১ জানুয়ারি।
আসলে শীতের মরসুম মানেই ডিম সেদ্ধ, কমলালেবু আর কেকের গন্ধ মিলেমিশে এক।আগের চেনা ছবি এখন বদলেছে অনেকটাই।এখন আর বাড়ি থেকে লুচি আলুরদম করে, কেক, লজেন্স, কমলালেবু ব্যাগবন্দি করে নিয়ে গিয়ে খাওয়া হয় না। কারণ, চারদিকে নামী-দামি রেস্তোরাঁ। বাচ্চাদের বায়না পিজ্জা, বার্গার, চিকেন ললিপপে।
তবে দীর্ঘদিনের বড়দিনের উচ্ছ্বাসে এবার বেড়ি পরিয়ে দিয়েছে নোভেল করোনা ভাইরাস। যে যেমনভাবেই বড়দিন পালন করুক না কেন, করোনার জেরে এখন আতঙ্ক-উদ্বেগ। স্বাস্থ্যবিধি মানতে গেলে ভিড়ভাট্টা, বাইরে যেখানে-সেখানে ঘোরা সম্ভব নয়। কিন্তু গত দশ মাসে খেলার মাঠ, স্কুল ছেড়ে বাড়িতে আটকে পড়া খুদেরাও তো হাঁসফাস করছে। বড়দিনে কি তারা মজা করবে না!
করবে নিশ্চই করবে। কোভিড স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবার বড়দিনের হইচই-একটু পাল্টালেই হবে।
বাড়ির ছাদ
করোনা আবহে পার্কস্ট্রিট বা কলকাতার জনপ্রিয় জায়গায় ভিড় এড়াতে চাইলে বাড়ির ছাদেও পার্টি করতে পারেন। আপনার বাড়িতে যদি খুদে সদস্য থাকে তবে তার কয়েকটি বন্ধু অথবা আত্মীয় স্বজন যাদের বাচ্চা আছে তাঁদের ডেকে নিন। বাড়ির ছাদে পার্টি করলে বয়স্করাও কিন্তু স্বচ্ছন্দে থাকতে পারবেন।বাইরে ঘুরে বেড়াতে গেলে এখন ভয় কোথা থেকে করোনা সংক্রমণ ঢুকবে।
তাই শীতের নরম রোদ্দুর মেখে দুপুরেই ছাদে টেবিল চেয়ার পেতে ব্যবস্থা করুন পার্টির। বাচ্চার মন ভালো করতে দাদু দিদি, ঠাম্মি, ঠাকুরদাদেরও ডেকে নিন। ডেকে নিন আপনার ক্ষুদের সমবয়সী এক দুজনকেও।
এবার ডিম সেদ্ধ থেকে মাংস ভাত, কমলালেবু থেকে নলেন গুড়ের পায়েস জমিয়ে করুন ভূরিভোজ। আর বড়দিন মানে কেক তো রাখতেই হবে। বাঙালি খাবার পছন্দ হলে নলেন গুড়ের সন্দেশ, লুচি নয়তো কড়াইশুটির কচুরি এগুলো কিন্তু পাতে দিতেই হবে।
পার্টির আগে ছাদ ভালো করে সাবান জল দিয়ে পরিষ্কার করুন। বাইরে থেকে অতিথি এলে তাঁদের হাত স্যানিটাইজ করান। গুটি কয়েক অতিথি নিয়ে পার্টি করুন যাতে মাস্ক ছাড়া ছাদে উঠে হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন। ব্যবস্থা রাখুন সফট ড্রিংকস ও পছন্দমতো মিউজিকের।
বড়দের পার্টি
অন্যান্যবার চার তারা, পাঁচ তারা রেস্তোরাঁয় পার্টি করলেও, এবার বরং ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে বাড়ির ছাদ বেছে নিন।
বাড়িতেই হার্ড ড্রিংক, স্ন্যাক্সস এর ব্যবস্থা করুন।
ছাদ আলো, ফুল, সান্টা দিয়ে সাজান বড়দিনের আমেজ তৈরি করতে।
বাড়িতেই ডিনার হোক আর হুল্লোড় হোক করোনামুক্ত।
অতিথি আপ্যায়ণের আগে দেখে নিন তিনি জ্বর, শর্দি, কাশিতে আক্রান্ত কিনা। তেমন হলে তাঁদের বুঝিয়ে পার্টি থেকে দূরে রাখবেন।যত ছোট পার্টি হবে ততই করোনা সংক্রমণের সম্ভবনা কমবে।
গ্রামের বাড়ি, বাগান
প্রতি বছর চিড়িয়াখানা, জাদুঘর, পার্কে ঘোরা হলে এবার বরং অন্যরকম ভাবুন। অনেকেরই গ্রামের বাড়ি থাকলেও সেই শিকর ছিঁড়তে বসেছে। বহুদিন যাওয়া হয় না। এবার বরং তেমন জায়গায় বড়দিনে ঘুরে আসুন। গ্রামের কোনও বাগানে বা ছাদে বা পুকুর পাড়ে খোলা জায়গায় খুব কম জনে পিকনিক করুন। যে জায়গায় পিকনিক করবেন সেই জায়গাটা প্রয়োজনমতো স্যানিটাইজ করে নিন। বাচ্চা থাকলে তার হাত বারবার পরিষ্কার করিয়ে দিন। চেষ্টা করুন বাড়ির লোকের মধ্যেই খাওয়াদাওয়া, হুল্লোড় সীমাবদ্ধ রাখতে।
অফবিট ডেস্টিনেশন
বড়দিনে যে সমস্ত জায়গাগুলোতে ভিড় হয় সেগুলো এড়িয়ে বরং গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন গ্রাম বাংলা দেখতে। আপনার বাড়ির খুদে যে কাঠবেড়ালি, পাখি, ভাম, খটাশ কিছুই দেখতে পায় না তাকে ঘুরিয়ে আনুন জেলার প্রান্তরের অনামী জায়গা থেকে। দেখবেন সবুজের সমারোহ, বিঘাকে বিঘাকে আলু, কপির খেত দেখে আপনার সন্তান কতটা মজা পাচ্ছে।
বাইরে থেকেই খাবার বানিয়ে, জল নিয়ে গাড়িতে উঠুন। বাচ্চার মুখে মাস্ক রাখবেন জনবহুল এলাকায়। তবে একেবারে ফাঁকা জায়গায় পৌঁছে গেলে মাস্ক খুলে আপনিও শ্বাস নেবেন আর বাচ্চাকেও খেলতে দেবেন। বিভিন্ন জেলায় এমন অনেক গ্রাম আছে। কোনও গন্তব্য ঠিক না করেও বেরিয়ে পড়তে পারেন। গ্রামের গাছগাছালি ঘেরা ফাঁকা জায়গা, গাছ তলা পেলে সেখানেই বরং খাওয়া দাওয়া সেরে নিন।
সঙ্গে রাখুন
সারফেজ স্যানিটাইজার, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, পানীয় জল, খাবার, ফ্লাস্কে চা-কফি, কাগজের প্লেট, বাটি, প্লাস্টিকের চামচ, মাস্ক (অন্তত ২ টো), বড় প্লাস্টিক, খবরের কাগজ বা বিছানার চাদর
খাবার খাওয়ার আগে স্যানিটাইজার স্প্রে করে নিন। হাতে সাবান দেওয়ার পরিস্থিতি না থাকলে অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার হাতে লাগিয়ে পরিষ্কার করে নিন।খাবার খেয়ে এঁটো প্লেটে নির্দিষ্ট থলিতে ভরে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলবেন। কারণ, যেখানে সেখানে ফেললে আপনি যদি করোনা সংক্রামিত হয়ে থাকেন না জেনে, তাহলে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। পাশাপাশি পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখাও আপনার কর্তব্য। বাচ্চারা চিপস, কেক খেয়ে প্লাস্টিক যেখানে সেখানে ফেললে তাকে বুঝিয়ে বলুন। প্লাস্টিক তুলে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলুন নয়তো ব্যাগে করে নিয়ে এসে আবর্জনার স্তুপে ফেলবেন।মাস্ক যেখানে সেখানে একেবারেই ফেলবেন না।
মনে রাখুন
জ্বর , শর্দি, কাশি হয়ে থাকলে ঘরেই আনন্দ করুন। বাইরে বের হবেন না। করোনায় যাতে সংক্রামিত না হন সে দায় যেমন আপনার, তেমনই আপনার থেকে যাতে রোগ বয়স্ক বা শিশুদের না ছড়ায় সেই দায়িত্বও আপনারই। সুস্থ, সবর শরীরে করোনা ভয়াবহ না হলেও অশক্ত শরীরের মানুষের কাছে এই ভাইরাস প্রাণঘাতী হতে পারে।বাইরের জামাকাড় অবশ্যই বাড়ি এসে গরম জলে সাবান দিয়ে কাচুন।
মন্তব্য - আলোচনায় যোগ দিন 0 মন্তব্য | প্রবেশ করুন