অফিসে ঢুকেই বড় বড় হাই তুলতে শুরু করল কলকাতার এক সংবাদ পোর্টালের কনটেন্ট এডিটর সুদেষ্ণা। স্বগতোক্তি করল “ যাচ্ছেতাই ব্যাপার। কাল রাতে একটুও ঘুমোইনি। নেটফ্লিক্সে নার্কোস সিজন ৩ দেখতে গিয়ে ভোরই হয়ে গেল। যেটুকু চোখ লেগেছিল, অফিসের তাড়ায় ধড়ফড়িয়ে উঠে পড়ায় ঘুমই হয়নি একদম। তাই এখন ঘুম পাচ্ছে। ” শ্যামবাজার ল কলেজের সিক্সথ্ সেমেস্টারের ছাত্রী হিয়ারও একই কাণ্ড। ক্লাসে লেকচার চলাকালীন চোখ লেগে গিয়েছিল। কড়া মাস্টারমশাই সুমনবাবুর ধমক খেয়ে মুখ কাঁচুমাচু। এবছরই হায়ার সেকেন্ডারি দেবে দেবার্ঘ। দিনে কড়া পাহারা। পড়া টিউশন। তাই রাত জেগে সে-ও দেখে নেয় শয়তান হাভেলি, স্পাই আরও কত কী।
সুদেষ্ণা, হিয়া বা দেবার্ঘর গল্প মোটামুটি এক। তিনজনেই স্মার্টফোনে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের ওয়েব সিরিজ দেখতে দেখতে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম, হইচই, হটস্টার, ভুট, ভিআইইউ আরও কতশত ওটিটি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। ওইসমস্ত প্ল্যাটফর্মে একের পর এক নেশা ধরানো সিরিজ। যেমন নেটফ্লিক্সে সেক্রেড গেমস,নার্কোস,মার্কো পোলো,মার্লিন,স্পাই উল্লেখ করতেই হয়। অ্যামাজন প্রাইমে মির্জাপুর,দ্য বয়েজ,দ্য ম্যান ইন হাই ক্যাসল,ব্রিদ,মেড ইন হেভেন,লাখো মে এক, শয়তান হাভেলি খুবই জনপ্রিয়। ভিআইইউ-তে স্পটলাইট, মেমোরিস, গ্যাহেরাইয়াঁ-র দর্শক কিছু কম নয়। হইচই-তে দুপুর ঠাকুরপো বেশ সাড়া ফেলেছিল। জনপ্রিয়তা পেয়েছে হ্যালো, একেনবাবু, জাপানি ডল, মিসম্যাচ।
সিনেমা, সিরিয়ালের থেকে ওয়েব সিরিজের নেশা কিছু কম নয়। এখন রোজকার জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে স্মার্টফোন। অতি ব্যস্ত জীবনে বিনোদন খুঁজে নিতে স্মার্টফোন নির্ভরতা এখন মারাত্মক। কিন্তু এরফলে বদলে যাচ্ছে মানুষের জীবনযাপন। বদলে যাচ্ছে শরীরের ঘড়ি। খ্যাদাভ্যাস, ঘুম। আর মারাত্মক এই নেশা মানুষের জীবনে ডেকে আনছে অনিদ্রা, অবসাদ, বিরক্তি, খিটখিটে মেজাজ, অস্থিরতা ও উদ্বেগের মতো নানা সমস্যা। এছাড়াও ওয়েব সিরিজে থ্রিলার, হরর মুভি দেখা বা গেম খেলার জন্য মস্তিস্কের স্নায়ু উত্তেজিত হয়ে পড়ে। সতর্ক করে দিয়েছেন শহরের এক নামী বেসরকারি হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জয়দীপ ঘোষ। এই আসক্তি কাটিয়ে উঠতে না পারলে মানুষের “স্ট্রেস রিলেটেড ফিজিওলজিক্যাল অ্যান্ড মেন্টাল ডিসর্ডার” আরও বাড়ত পারে। রাত ৮টা থেকে ৯টার পর শরীর বা মনে চাপ পড়তে পারে,নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করতে পারে এমন কোনও মুভি, ওটিটি কনটেন্ট দেখা বা মোবাইল গেম না খেলার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
বিঞ্জ ওয়াচিংয়ে শারীরিক সমস্যা
দৈনন্দিন কাজকর্মেও ভীষন প্রভাব ফেলে বিঞ্জ ওয়াচিংয়ের নেশা। কিন্তু চাইলেই তো ছাড়া যায় না। মানসিকভাবে এই আসক্তির মোকাবিলা কী করে করবেন? উত্তর দিয়েছেন মনোবিদ বিদিতা ভট্টাচার্য। তিনি জানিয়েছেন, রাত জেগে মোবাইল ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ওয়েবসিরিজ ও সিনেমা দেখা অনেকেরই মারাত্মক নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিঞ্জ ওয়াচিংয়ে মানসিক সমস্যা
কীভাবে নেশামুক্তি ঘটবে:
মন্তব্য - আলোচনায় যোগ দিন 0 মন্তব্য | প্রবেশ করুন